
বুকের দুধ কীভাবে বাড়িতেই সংরক্ষণ করে রাখবেন, কর্মরতা মায়েরা জেনে নিন
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সদ্য সন্তান হয়েছে। নবজাতকের পুষ্টির প্রধান উপাদানই হচ্ছে মায়ের বুকের দুধ। সন্তানকে স্তন্যপান করাতে আপত্তি না থাকলেও বেশিরভাগ মায়েরা মনে করেন বাচ্চার পেট ভরানোর জন্য অতিরিক্ত কৌটোর দুধ প্রয়োজন। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, জন্মের এক ঘণ্টা পর থেকেই মায়ের শরীর থেকে যে হলুদ দুধ বা কলোস্ট্রাম নিঃসৃত হয়, তাই হল সদ্যোজাতের পুষ্টির অন্যতম উপকরণ। রোগ প্রতিরোধ শক্তিও তৈরি হয় এই হলুদ দুধ থেকেই।
বুকের দুধ কীভাবে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে সে ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান নেই অনেকেরই। যদিও আমাদের দেশে মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস অবধি পাওয়া যায়। তবুও সদ্য মা হয়েছেন এমন কর্মরতা মহিলাদের নানারকম সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনলাইনে ব্রেস্ট মিল্ক কেনা বা টিনবন্দি দুধ বাচ্চাদের জন্যও একেবারেই নিরাপদ নয়। তাই ডাক্তারবাবুরা বলছেন, বিশেষ উপায় বাড়িতেই ব্রেস্ট মিল্ক দীর্ঘসময় সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন সদ্য মায়েরা।
জন্মের পরে প্রথম ছ’মাস যে শিশু শুধুমাত্র মায়ের দুধ খায়, তার দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্য শিশুর থেকে প্রায় ১৪ গুণ বেশি থাকে। তাই প্রথম ছ’মাস শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোরই পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তাররা। অনেক সময়ই শারীরিক পরিস্থিতির জন্য দুগ্ধ উৎপাদনে মায়েরা অক্ষম হয়ে থাকেন। এ ছাড়া জন্মের পরে মায়ের মৃত্যু হয়েছে এমন শিশুরা বা রাস্তাঘাটে এমন অনেক শিশুর খোঁজ মেলে যাদের মায়ের পরিচয় জানা যায় না। অপুষ্টিতে ভোগা এই সব শিশুদের জন্য মাতৃদুগ্ধের ব্যাঙ্ক চালু রয়েছে কয়েকটি রাজ্যে। সেখানেও বিশেষ উপায় ব্রেস্ট মিল্ক সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
এখন দেখে নেওয়া যাক কীভাবে ব্রেস্ট মিল্ক বাড়িতেই সংরক্ষণ করে রাখবেন মায়েরা—
কর্মরতা মহিলারা বিশেষ করে এই উপায় সন্তানের জন্য ব্রেস্ট মিল্ক সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যান্ত্রিক উপায় ব্রেস্ট মিল্ক পাম্প করে বের করে তা বোতলে ভরে রাখেন মায়েরা। এই দুধ রেফ্রিজারেটরে সহজেই সংরক্ষণ করা যায়।
- প্রথম তিন থেকে ছ’মাস রেফ্রিজারেটরের স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেই বুকের দুধ সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব।
- ৬ মাসের পর থেকে ডিপ ফ্রিজারে ব্রেস্ট মিল্ক রাখাই ভাল। ৬-১২ মাস অবধি এই পদ্ধতিতে বুকের দুধ সংরক্ষণ করতে পারেন মায়েরা।
- পাম্প করার সময় খেয়াল রাখতে হবে কোনও অপচয় যাতে না হয়। কম করে ২ থেকে ৪ আউন্স দুধ পাম্প করে ফ্রিজে ঢোকানোই ভাল।
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্রিজার বা ডিপ ফ্রিজারের একদম ভেতরে ব্রেস্ট মিল্কের বোতল বা ক্যান রাখা ভাল। দরজার একদম কাছে রেখে বার বার তাতে হাত দিলে জীবাণু ঢুকে যেতে পারে।
- মায়েরা যখন সফর করবেন, ট্রেনে-বাসে অথবা বিমানে, তখন কুলার ব্যাগ বা বরফ প্যাকের মধ্যে পাম্প করে বের করা দুধের বোতল রাখতে পারেন। ২৪ ঘণ্টা এভাবে ব্রেস্ট মিল্ক তাজা রাখা যায়।
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সদ্য পাম্প করে বের করা দুধ ঘরের তাপমাত্রায় চার ঘণ্টা অবধি ভাল থাকে। তারপর ডিপ ফ্রিজারে রাখাই ভাল। চার দিন অবধি ডিপ ফ্রিজে দুধ সংরক্ষণ করে রাখা যেতে পারে। এর বেশি সময় না রাখাই ভাল।
রেফ্রিজারেটর থেকে বের করার পর কী করবেন—
- মায়েরা রোজই ব্রেস্ট মিল্ক পাম্প করে ফ্রিজে রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে একদম আগে ফ্রিডে ঝোকানো বোতলগুলো আগে শেষ করুন। তারপর নতুনগুলোর ব্যবহার করুন।
- ফ্রিজ থেকে বের করার পরে ঘরের তাপমাত্রায় ২ ঘণ্টা অবধি তাজা থাকে দুধ। এর বেশি সময় রাখলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একবার ফ্রিজ থেকে বের করলে কুলার ব্যাগে রেখে ৪৮ ঘণ্টা অবধি সেই দুধ বাচ্চাকে খাওয়ানো যেতে পারে। তার বেশি নয়। ফ্রিজ থেকে বের করা দুধ ফের ফ্রিজে না রাখাই ভাল।
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্রিজ থেকে বের করা ব্রেস্ট মিল্ক কিছুক্ষণ রেখে ঠান্ডাই খাওয়ান বাচ্চাদের বা উষ্ণ গরম করে নেওয়া যেতে পারে। সরাসরি স্টোভ বা মাইক্রোওয়েভে কখনওঅ ব্রেস্ট মিল্ক হিট করবেন না।
- বাচ্চা যদি বোতলের দুধ সবটা শেষ করতে না পারে তাহলে ঘণ্টা দুয়েক পরে তা আবার খাওয়ানো যেতে পারে। একবার বোতল খুলে ফেলার পরে ২ ঘণ্টার বেশি ঘরের তাপমাত্রায় না রাখাই ভাল।