
ভারতে বায়ুদূষণে বাড়ছে গর্ভপাত, বিষ-বাষ্প ক্ষতি করছে গর্ভস্থ ভ্রূণের, ল্যানসেটের গবেষণায় দাবি
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাতাস ভরছে বিষ-বাষ্পে। বাতাসে ভাসমান ক্ষতিকর রাসায়নিক কণার পরিমাণ বাড়ছে। যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে। ‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ’ জার্নালের রিপোর্ট বলছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর ভারতে গর্ভপাতের পরিমাণ বাড়ছে। জন্ম দেওয়ার আগে সন্তান হারাচ্ছেন গর্ভবতী মায়েরা। ভারত শুধু নয়, পাকিস্তান ও বাংলাদেশেও এই সংখ্যা বেশি।
গবেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি বছর বায়ুদূষণ জনিত কারণে গর্ভপাতের সংখ্যা সাড়ে তিন লক্ষের কাছাকাছি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে ভারত অনেকটাই এগিয়ে। এরপরে রয়েছে, পাকিস্তান ও বাংলদেশ।
বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম১০) ও অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২.৫)পরিমাণ সীমা ছাড়িয়েছে। গবেষকরা বলছেন, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ক্ষতিকর ধূলিকণার পরিমাণ ৪০ মাইক্রোগ্রামের বেশি হলেই তা মানুষের শরীরে প্রভাব ফেলে। বিশেষত, এই ভাসমান অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণা ফুসফুসের মধ্যে ঢুকে শ্বাসযন্ত্রের জটিল সংক্রমণ ঘটায়। গর্ভবতী মহিলাদের প্লাসেন্টায় ক্ষত তৈরি করতে পারে এই বিষাক্ত কণাগুলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনে বলা হয়েছে, বাতাসে ভাসমান কণার পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রামের বেশি হলে গর্ভপাতের শঙ্কা বাড়ে ২৯ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়াতে ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বায়ুদূষণজনিত কারণেই ৭ শতাংশ গর্ভপাত হয়েছিল।
চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব মেডিক্যাল সায়েন্সের গবেষণাও বলছেন, ক্ষতিকর রাসায়নিক কণার গর্ভপাত যেমন বাড়ছে, তেমনি সময়ের আগেই সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন মায়েরা। বায়ুমণ্ডলে ওই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা (পিএম)-গুলি খুব সহজে মিশে যেতে পারে। কিন্তু যদি পিএম কণাগুলির ব্যাস বেশি হয় তাহলে বায়ুমণ্ডলে মিশে যেতে সময় লাগে বেশি। বিদ্যুৎকেন্দ্র, গাড়ি, ট্রাক, অগ্নিকাণ্ড, ফসল পোড়ানো ও কারখানার চিমনি থেকে এই দূষণ-কণাগুলি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। পরে বাতাসের ধূলিকণাকে আশ্রয় করে বিষবাস্প তৈরি করে। দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৭৬.৮% মানুষই দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন বা শ্বাস নিতে বাধ্য হন। দূষণ-কণাগুলি খুব সহজে ফুসফুসের অনেক গভীরে ঢুকে যেতে পারে। যার কারণেই হৃদরোগ, স্ট্রোক, শ্বাসকষ্ট ও ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে।
ল্যানসেটের গবেষণা বলছে, বায়ুদূষণের কারণে এই মুহূর্তে সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি হল দক্ষিণ এশিয়ার। ২০১৮ সালের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল প্রথম ২০টি দূষিত শহরের মধ্যে ১৮টিই ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের। বেজিং এক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় প্রথম স্থানে থাকলেও বর্তমান ক্রমানুসারে ১২২তম স্থানে। কিন্তু, ভারতের অবস্থান কোনও রকম উন্নতি হয়নি। দিন দিন দূষণের মাত্রা সেখানেই বেড়েই চলেছে।
গোটা বিশ্বের কাছেই বায়ুদূষণ হল ‘সাইলেন্ট কিলার।’ প্রতি বছর প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় দূষণের জেরে। এই ৭০ লক্ষ মানুষের মধ্যে আবার ৬ লক্ষ শিশু। বায়ুদূষণের ফলে শ্বাসজনিত সমস্যা, ফুসফুসের সংক্রমণ, হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছাড়াও ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ফি বছর প্রাণ যায় অন্তত ৬ লক্ষ শিশুর।
পরিবেশবিদরা বলছেন, বায়ুদূষণের মাত্রা যদি ঘনমিটার-পিছু ১০ মাইক্রোগ্রাম কমানো যায়, তা হলে শ্বাসরোগ, হৃদ্রোগের মাত্রা তিন শতাংশ কমতে পারে। দূষণে রাশ টানতে হলে ধোঁয়ায় রাশ টানা জরুরি।গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে উন্নত করলে এই সমস্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব। সেই সঙ্গে শিল্প-কারখানার ধোঁয়া এবং আবর্জনা পোড়ানো ও কৃষিজমিতে খড়পোড়া ধোঁয়ায় লাগাম টানতে হবে।