
করোনা পজিটিভ অন্তঃসত্ত্বাদের খাওয়ানো যাবে না এই ওষুধ, মারাত্মক ক্ষতি হবে শিশুর: ল্যানসেট
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনা সংক্রমণ গর্ভস্থ ভ্রূণের ওপরে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে সে নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। গর্ভবতী মহিলাদের কোভিড পজিটিভ ধরা পড়লে কী ধরনের চিকিৎসা করতে হবে সে নিয়েও যথোপযুক্ত গাইডলাইন নেই। করোনা চিকিৎসায় যে ওষুধগুলিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে তাই দেওয়া হচ্ছে অন্তঃসত্ত্বাদেরও। এমনকি স্টেরয়েডের ডোজও দেওয়া হচ্ছে ক্ষেত্রবিশেষে। বিশ্বের সবচেয়ে ভরসার যোগ্য মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, গর্ভবতী মহিলাদের কোভিড থেরাপি করতে হলে সবরকম ওষুধ দেওয়া যাবে না। বিশেষ করে কর্টিকোস্টেরয়েড ডেক্সামিথাসোন যা কোভিড রোগীদের জন্য জীবনদায়ী বলে দাবি করা হয়েছে, তাই মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের।
করোনা আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন কানাডার মন্টরিয়াল ইউনিভার্সিটি ও ফ্রান্সের ক্লড বার্নার্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। ‘দ্য ল্যানসেট’ মেডিক্যাল জার্নালে সেই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, করোনা চিকিৎসায় ক্লোরোকুইন, হাইড্রক্সোক্লোরোকুইন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, এইচআইভির ওষুধ (ইন্ডিনাভির, লোপিনাভির/রিটোনাভির, র্যাল্টেগ্রাভির) ও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। এই সমস্ত ওষুধ কোভিড পজিটিভ গর্ভবতী মহিলাদেরও দেওয়া হচ্ছে। যার মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে মা ও সন্তানের শরীরে।
গবেষকরা বলছেন, ডেক্সামিথাসোন খাওয়ানো হয়েছে এমন ১০৭ জন গর্ভবতী মহিলা সময়ের আগেই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। প্রি-ম্যাচিওর ডেলিভারির কারণে সদ্যোজাতের শরীরেও নানারকম জটিলতা দেখা গেছে। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের এমনিতেও নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে স্টেরয়েডের বেশি ডোজ বা অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার গর্ভস্থ ভ্রূণের মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
ডেক্সামিথাসোন হল কর্টিকোস্টেরয়েড। এমন স্টেরয়েড যাকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়। করোনায় রোগীদের শরীরে যে তীব্র প্রদানজনিত রোগ বা ইনফ্ল্যামেশন তৈরি হয়, তাকে কমাতে পারে ডেক্সামিথাসোন। সাইটোকাইন স্টর্ম রুখে দিতে পারে এই স্টেরয়েড। গবেষকরা বলছেন, গর্ভবতী মায়েদের ডেক্সামিথাসোন বেশি খাওয়ালে তার প্রভাব পড়বে শিশুর শরীরেো। নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম, জন্মের সময় অতিরিক্ত কম ওজনের ঝুঁকি বাড়বে। প্রি-ম্যাচিওর বার্থ শুধুই শারীরিক নয়, ডেকে আনতে পারে নানা রকমের মানসিক সমস্যাও। জন্মের সময় কম ওজন থাকলে পরে মানসিক গঠনের পথে তা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই ধরনের শিশুরা মনযোগের অভাব, উৎকণ্ঠাজনিত সমস্যার পাশাপাশি কিছু সামাজিক সমস্যাতেও ভোগে।
গর্ভবতী মায়েরা সংক্রমিত হলে কতটা জটিল অসুখ করতে পারে তা এখনও সঠিকভাবে বলতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের পরীক্ষা করে দেখা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে সংক্রমণ জটিল পর্যায়ে পৌঁছয়নি। হাল্কা জ্বর, মাথাব্যথা, গা-হাতপায়ে ব্যথার মতো লক্ষণ দেখা গেছে। ভাইরাল ফ্লু-এর মতো উপসর্গও দেখা গেছে অনেকের। আবার অনেকেরই রোগের কোনও বাহ্যিক লক্ষণ দেখা যায়নি। উপসর্গহীন বা অ্যাসিম্পটোমেটিক মায়েরা প্রসবের আগে জানতে পেরেছেন তাঁরা করোনা আক্রান্ত। আর প্রসবের পরে দেখা গেছে সন্তানের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়েছে। তাই এমন ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েদের কড়া ডোজের অ্যান্টি-ভাইরাল বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের বদলে অন্য কোনও রকম থেরাপি করা সম্ভব কিনা সে ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করতে বলছেন গবেষকরা।