
কেরিয়ার না মাতৃত্ব, দ্বন্দ্বের মাঝেই হাজির হাজারো সমস্যা! আছে সমাধানও
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মেয়েবেলা হোক সুস্থ ও সুন্দর। মেয়েদের শরীরের যে নানা পরিবর্তন, তার সঙ্গে আসা শরীর-মনের বিচিত্র সব সমস্যা, সেই সব সমস্যা আর তার সুরাহা নিয়ে দ্য ওয়ালে শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক ‘মা ও মেয়ে’।
মেয়েদের শারীরিক সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে যে-সব প্রশ্ন জাগে, অনেক সময়েই তারা মা-বাবা বা অন্য অভিভাবকদের সেগুলো জানাতে পারে না। ফলে উত্তর অজানা থেকে যায়। মায়েরাও বুঝতে পারেন না কী করবেন। মেয়েদের নানা শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণাও আছে। বিশেষ করে হরমোনের নানা বদল, গাইনোকলজিক্যাল সমস্যা নিয়ে মায়েদের অনেক প্রশ্ন থাকে। সেই সব প্রশ্নের উত্তর সহজ ব্যাখ্যায় ও বিস্তারিত বুঝিয়েছেন ক্রেডেল ফার্টিলিটি সেন্টারের ফাউন্ডার ও ডিরেক্টর, বিশিষ্ট গাইনোকলজিস্ট ডাঃ এসএম রহমান।মেয়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা একসময় উপেক্ষিত ছিল। তবে এখন সেই মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণায় আমূল আদল এসেছে। মেয়েদের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতার প্রচার হচ্ছে চারদিকে। নারীস্বাস্থ্য নিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে আস্ত একটা বিষয় তৈরি হয়েছে যাকে আমরা বলি, গাইনোকোলজি। কাজেই মেয়েদের শারীরিক সমস্যা এখন পর্দার আড়ালে রাখার ব্যাপার নয়। ডাঃ রহমান বলছেন, পিউবারটির পর থেকে মেনোপজ অবধি মেয়েদের শরীরে কী কী বদল আসে, ছোটখাটো শারীরিক সমস্যা, মাতৃত্ব নিয়ে জটিলতা ও তার সহজ সমাধানের উপায়।
বড় হচ্ছে মেয়ে, সমস্যাও বাড়ছে

বয়ঃসন্ধি পেরোনোর পরে তরুণীবেলায় পৌঁছয় মেয়েরা। এ সময়ে মেনোরেজিয়ার সমস্যা খুব কমন। মেনোরেজিয়া হলে পিরিয়ডের সময় রক্তস্রাবের পরিমাণ খুব বেশি হয়। এর ফলে অ্যানিমিয়ার সম্ভাবনাও থাকে। এই সমস্যার কমন কারণ হল ফাইব্রয়েড অর্থাৎ ইউটেরাসে টিউমার। ওভারির সিস্ট বা চকলেট সিস্ট অর্থাৎ এন্ডোমেট্রিওসিসও এই মেনোরেজিয়ার কারণ।এর পাশাপাশি অবশ্যই আছে পিসিওডি। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ। এই সমস্যায় অলিগোমেনোরিয়া দেখা যায়। অর্থাৎ পিরিয়ড হয় অনেক দিন ছাড়া ছাড়া। কারও ক্ষেত্রে আবার খুব ঘনঘন পিরিয়ড হচ্ছে, পলিমেনোরিয়া।
আদর্শ ঋতুস্রাব চক্র

দুটি মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলের আদর্শ ব্যবধান হওয়া উচিত ২৮ দিন। কিন্তু সাত দিন কম-বেশি হলেও সেটা অস্বাভাবিক নয়। অর্থাৎ ২১ দিন থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে সাইকেল থাকলে তা নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু তার চেয়ে বেশি ঘনঘন হলে বা দেরি করে হলে, তা নিয়ে চিকিৎসা প্রয়োজন। মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলে ব্লিডিং হওয়া উচিত ৩ থেকে ৫ দিন। তার চেয়ে বেশি ব্লিডিং হলে কিন্তু তা নর্মাল নয়। মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল চলাকালীন ৩০-৫০ এমএল রক্তস্রাব স্বভাবিক। ৭০-৮০ এমএল অবধিও ঠিক আছে। দিনে মোটামুটি তিনটি স্যানিটারি ন্যাপকিন লাগার কথা এক তরুণীর। তার চেয়ে বেশি লাগলে বুঝতে হবে তাঁর ব্লিডিং বেশি হচ্ছে।
পেটে ব্যথা

পিরিয়ডের সময়ে পেটে ব্যথাও আরও একটি সমস্যা। হাল্কা ব্যথা, মাইল্ড ক্র্যাম্প হতে পারে। কিন্তু সেই ব্যথায় যদি তিনি কুঁকড়ে থাকেন, কাজে যেতে না পারেন, তাহলে ডাক্তার দেখানো উচিত। একে বলা হয় ডিসমেনোরিয়া। পরীক্ষা করে দেখতে হবে, ফাইব্রয়েড ইউটেরাস, এন্ডোমেট্রিওসিস, পিসিওডি বা আছে কিনা। সেইমতো হবে ট্রিটমেন্ট। ওষুধ বা অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত হয় তার পরে।হরমোনাল ডিসব্যালেন্সের কারণেও এমন হতে পারে। অনেক সময়ে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে আপনাআপনি সেরে যায় সমস্যা।
মেয়েদের ‘সময়মতো’ বিয়ে জরুরি
মেয়েদের ওভারির বয়স বাড়ে শরীরের বয়সের সঙ্গে সঙ্গেই। কিন্তু অনেক সময়েই শরীরের বয়সের চেয়ে ওভারির বয়স বেশি হয়ে যায়। এখন লাইফস্টাইল বদলে গেছে, পলিউশন এত বেড়েছে চারপাশে, বেড়েছে স্ট্রেস, সব মিলিয়ে অনেক তাড়াতাড়ি বয়স হচ্ছে ওভারির। এখন আর ৩৬-৩৭ নয়, ৩২ থেকেই বয়স্ক হতে শুরু করছে ওভারি।

মেডিক্যালি যদি দেখা যায়, ২০-২৫ বছর বয়সে সবচেয়ে ভাল থাকে ওভারির অবস্থা। তার পর থেকেই গ্রাফটা পড়তে থাকে একটু একটু করে। আবার এই বয়স থেকে মেয়েদের কেরিয়ারের গ্রাফ উঠতে থাকে একটু একটু করে। এ দুটো ব্যস্তানুপাতিক। এটা একটা বড় সমস্যার বিষয়। কেরিয়ার সামলে মেয়েরা যখন বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তখন সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। কেরিয়ারের চাপের মধ্যেও ‘সময়মতো’ বাচ্চা নিতেই হবে, এমন জবরদস্তি করা সম্ভব নয়। আবার ওভারি বা এগ্সের হেল্থও অনন্তকাল ভাল রাখা যাবে, এমনটাও নয়।
তাহলে উপায় কী!
কোনও মহিলার স্বপ্ন, উচ্চাকাঙ্ক্ষা আটকানো যায় না। আবার ২০-৩০ বছরের মধ্যে মা হওয়াটা যে ‘আদর্শ’ একটা সময়, তাও মানতেই হবে। তাই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এসেছে উসাইট ফ্রিজিং বা এমব্রায়ো ফ্রিজিংয়ের বিকল্প।

এমন অনেক দম্পতি রয়েছেন, যাঁরা বিয়ে করেছেন অথচ এখনই মা-বাবা হওয়ার জন্য প্রস্তুত নন। কখন প্রস্তুত হবেন, তাও তাঁরা জানেন না। এই দম্পতিরা চাইলে কনসিভ করে, সেই ভ্রূণটাকে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। কয়েক বছর পরে যখন চাইবেন, তখন এই ভ্রূণ থেকেই সন্তানের জন্ম হতে পারে।
আবার অনেক মেয়ে বিয়ে করেননি এখনও। মা হতে চান ভবিষ্যতে, কবে জানেন না। তাঁরা কিন্তু কম বয়সেই উসাইট ফ্রিজ করে রাখতে পারেন অর্থাৎ ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত ভাল থাকে এই ডিম্বাণু। এর গুণগত মানও বজায় থাকে। বেশি বয়সে মা হওয়ার যা যা সমস্যা, তা এড়ানো যেতে পারে এই পদ্ধতিতে। তাঁর কমবয়সি অবস্থায় উৎপন্ন ডিম্বাণুগুলি কাজে লাগতে পারে তখন। এই পদ্ধতি এমন কিছু দামি নয়, মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরাও কাজে লাগাতে পারেন।