জিম করতে করতে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক, অতিরিক্ত ঘাম ঝরাতে গিয়েই কি বিপদ ঘটছে?

গুড হেলথ ডেস্ক

কম সময়ে অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে গিয়েই বিপদে পড়ছেন কমবয়সিরা। ট্রেডমিলে দৌড়তে দৌড়তেই হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হল? কিংবা সকালে হাঁটতে গিয়েই বিপত্তি? কয়বয়সি হোক বা পশ্চাশোর্ধ্ব— এই ব্যামো যেন কাউকে ছাড়ছে না। সম্প্রতি বাঁশদ্রোণীর এক তরুণী ঋতিকা দাসের মৃত্যু হয়েছে জিম করতে করতেই। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই তরুণী। বুকে ব্যথা হচ্ছে বলে জানান বাকিদের। হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই সব শেষ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন খবরের কাগজে, অনলাইন মাধ্যমে, টিভির পর্দায় সারা ক্ষণ শরীরচর্চা করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এক্সারসাইজ করতে হলে তা সঠিকভাবে করাই উচিত। নানারকম বিজ্ঞাপন দেখে, অ্যাপ নির্ভর ফিটনেস টিপস দেখে ব্যায়াম করতে গিয়ে বিপত্তি বাঁধাচ্ছেন অনেকে। এখন প্রায়শই শোনা যায় ট্রেডমিলে দীর্ঘক্ষণ দৌড়তে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে।

exercise

সিদ্ধার্থ শুক্লর কথা মনে আছে তো?জনপ্রিয় এই টিভি স্টার মাত্র চল্লিশেই হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছিলেন। শোনা গিয়েছিল, মাত্রাতিরিক্ত জিম করাই কাল হয়েছিল তাঁর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনি রোজ নিয়ম করে জিম বা কার্ডিও করছেন মানেই আপনি ফিট তা কিন্তু হয়। আপনার হার্ট দুর্বল কিনা তা হয়ত আপনি নিজেই জানেন না। এর মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেডমিলে স্পিড বাড়িয়ে ছুটলে হিতে বিপরীত হতে বাধ্য।

Exercise Spreads

শরীরচর্চা করুন, কিন্তু নিয়ম মেনে

শরীরচর্চা করে গেলেই হবে না। প্রত্যেক বছর এক বার অন্তত সব রকম মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। শরীরে কোথাও কোনও রকম সমস্যা আছে কি না দেখে নেওয়া প্রয়োজন। অনেক সময়ে কোনও রকম শারীরিক অসুবিধা হচ্ছে না বলেই কেউ পরীক্ষা করান না। কিন্তু তাতে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

হার্টে ব্লক রয়েছে কিনা, হার্ট রেট বেশি কিনা, হৃদস্পন্দনে কোনও গোলমাল আছে কিনা তা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি। আপনার হার্টের অবস্থা কেমন তা না জেনেই যদি ভারী ব্যায়াম, কার্ডিও করতে শুরু করেন তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

সুস্থ থাকার জন্য শরীরচর্চা শুধু একটি অংশ। সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অনেকে ভাবেন, নিয়মিত শরীরচর্চা করলে যা ইচ্ছে খাবার খাওয়া যায়। কিন্তু জাঙ্ক ফুড বা প্যাকেটজাত খাবার বেশি খেলে  ধীরে ধীরে লিভার, হার্টের অবস্থা খারাপ হতে থাকে।

Health

শরীরচর্চা করার পাশাপাশি পরিমাণ মেপে ব্যালান্সড ডায়েটও খুব প্রয়োজন। শরীরে সব রকম পুষ্টিগুণ যাতে যায়, তার জন্য প্রয়োজন মতো ভিটামিন-মিনারেলস দরকার। সেইমতো খাবার খেতে হবে। জিম করলে বা বাড়িতেই কার্ডিও, ওয়েট ট্রেনিং করলে সেই মতো ডায়েটও দরকার। সময় মতো ক্যালোরি মেপে খেতে হবে, তাহলেই ভারী এক্সারসাইজ করার মতো শক্তি পাবে শরীর। এই নিয়ম না মেনে এক্সারসাইজ করতে থাকলে বিপদ হবে।

শুরুতেই অনেক ক্ষণ ধরে ব্যায়াম করা অনুচিত। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের সময় বাড়াতে হবে। এবং শরীরকে সময় দিতে হবে মানিয়ে নেওয়ার। যার যেমন ক্ষমতা সেই অনুযায়ী শরীরচর্চা করতে হবে।

চটজলতি ওজন কমানো যায় না, এটা মাথায় রাখতেই হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেদের স্তর যেমন ধীরে ধীরে জমে তেমনি তা কমানোর প্রক্রিয়াও হওয়া উচিত সময় নিয়ে ও নিয়ম মেনেই। হঠকারিতায় বিপদের ঝুঁকি বাড়ে।

পরিবারের কারও কোনও রকম হৃদরোগের ঘটনা রয়েছে কি না, তা দেখে নেওয়া খুবই প্রয়োজন। অনেকেই এই বিষয়টা অবহেলা করেন।

নিজের খেয়ালখুশি মতো ব্যায়াম করলে হবে না। প্রশিক্ষক যতক্ষণ বলবেন, যেমন বলবেন তেমনটাই করা ভাল। অনেকে বাড়িতেও ট্রেডমিল কিনে অভ্যাস করেন। সেক্ষেত্রে একবার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রাখা ভাল।

চিকিৎসকের পরমর্শ নিয়ে শরীরচর্চা শুরু করতে হবে। একটি ‘ফিট সার্টিফিকেট’ নিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।