
প্লাস্টিক-খেকো ব্যাকটেরিয়া হুড়মুড়িয়ে ঢুকছে শরীরে, অ্যান্টিবায়োটিক খেলেও মরবে না
গুড হেলথ ডেস্ক
সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্লাস্টিকের কণা ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার (Bacteria) আঁতুরঘর। প্লাস্টিকের একদম ছোট ছোট অংশ যাকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয়, সেগুলির ওপরেই দিব্যি জন্ম নেয় এবং সংখ্যাতেও বাড়ে ব্যাকটেরিয়ারা। এইসব ব্যাকটেরিয়ারা আবার অ্যান্টিবায়োটিকেও ঘায়েল হয় না। প্লাস্টিকজাত ব্যাকটেরিয়া রীতিমতো অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী। মানুষের শরীরে জটিল অসুখবিসুখ বাঁধাতে পারে। এমনটাই বলছে সাম্প্রতিক গবেষণা। প্লাস্টিক দূষণের ভয়ঙ্কর প্রভাব যে ফলতে শুরু করেছে সে নিয়ে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।
মাইক্রোপ্লাস্টিকের রাসায়নিক উপাদান মানব শরীরের জন্য বিষাক্ত, এ কথা পইপই করে বোঝানোর চেষ্টা করছেন গবেষকরা। তাও প্লাস্টিকের বাড়বাড়ন্ত চারদিকেই। নিউ জার্সি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এনজেআইটি)-র গবেষকরা বলছেন, নদীনালা, বা খালবিলের জলে যে সমস্ত প্লাস্টিকজাত উপাদান মিশছে, সেগুলিরই ভগ্নাংশ মাইক্লোপ্লাস্টিক হয়ে জমছে জলে বা মাটিতে। এইসব মাইক্রোপ্লাস্টিকের সারফেস বা পৃষ্ঠদেশ মসৃণ হয়। তার ওপরেই জন্ম নেয় ব্যাকটেরিয়া (Bacteria), প্যাথোজেন। এই সমস্ত ব্যাকটেরিয়া প্লাস্টিকের সারফেসে দীর্ঘসময় বেঁচেবর্তে থাকতে পারে। দ্রুত বিভাজিতও হতে পারে। এই সমস্ত ব্যাকটেরিয়া প্লাস্টিক থেকে জলে মেশে বা মাটিতে মিশে যায়। সেখান থেকে খাদ্য, জলের মাধ্যমে মানব শরীরে ঢুকে পড়ে।
‘হ্যাজারডাস মেটিরিয়াল লেটারস’ নামক সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণার খবর সামনে এনেছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। গবেষকরা বলছেন, পরীক্ষা করে দেখা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিকের ওপর জন্মানো ব্যাকটেরিয়া ৩০ গুণ বেশি সংক্রামক। দ্রুত প্রতিলিপিও তৈরি করতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়াদের জেনেটিক মিউটেশন তথা জিনগত বদলও খুব দ্রুত হয়।
প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে গবেষণা চালাতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা এই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক-রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়ার (Bacteria) খোঁজ পান। প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ বা ভগ্নাংশ হল মাইক্রোপ্লাস্টিক।
এক একটা প্লাস্টিকের ভগ্নাংশের দৈর্ঘ্য ৫ মিলিমিটারেরও কম। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দুই ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক আছে, এক ‘প্রাইমারি মাইক্রোপ্লাস্টিক’ যাদের দৈর্ঘ্য ৫ মিলিমিটার বা তার কম, যেগুলির মধ্যে পড়ে মাইক্রোফাইবার, মাইক্রোবিডস এবং প্লাস্টিক প্যালেট। দুই, ‘সেকেন্ডারি মাইক্রোপ্লাস্টিক’ ৫ মিলিমিটারের কম মাইক্রোপ্লাস্টিক যেগুলি বড় বড় প্লাস্টিকজাত উপাদানের ভগ্নাংশ। সাধারণত, নদীনালা, খালবিল, নিকাশী নালার জলে যে সব বর্জ্য প্লাস্টিক ফেলা হয় সেগুলিরই অংশ। গবেষকরা বলছেন, সমুদ্রে গিয়েও মিশছে এই দূষিত প্লাস্টিকের কণা। যে কারণে সামুদ্রিক জীবেরাও ভয়ানক সঙ্কটে আছে।
মাইক্রোপ্লাস্টিকে কীভাবে জন্মাচ্ছে ব্যাকটেরিয়া? গবেষক মেনগ্যান লি বলেছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিকের ওপরে একটি পাতলা স্তর তৈরি হয়, যাকে বলে বায়োফিল্ম। এই বায়োফিল্মের ওপর ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকে অপ্রতিরোধ্য। কারণ, প্লাস্টিকজাত ব্যাকটেরিয়ার তিনটি জিন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে নষ্ট হয় না। গবেষক বলছেন, পলিইথিলিন ও পলিস্টাইরিনের মাইক্রোপ্লাস্টিকের ল্যাবোরেটরি টেস্ট করে দেখা গেছে, বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া জন্মাচ্ছে এই মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলোর ওপর যাদের নির্দিষ্ট তিনটি জিন sul1, sul2 ও intI1 অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী। অর্থাৎ এই ব্যাকটেরিয়ার জিন যদি মানুষের শরীরে ঢোকে তাহলে ওষুধ খেলেও সহজে রোগ সারবে না। বরং সংক্রামকও হয়ে উঠতে পারে ব্যাকটেরিয়া। বিজ্ঞানীরা ব্যাকটেরিয়ার এই জিনগুলির সঙ্গে সালফামিথোক্সাজোল অ্যান্টিবায়োটিক মিশিয়ে দেখেছেন খুব একটা কাজ হয়নি। অ্যান্টিবায়োটিকের থেকেও ৪.৫ গুণ বেশি শক্তিশালী এইসব ব্যাকটেরিয়ারা (Bacteria)।
মানুষের শরীরে কী প্রভাব ফেলে মাইক্রোপ্লাস্টিক?
গবেষকরা বলছেন, প্লাস্টিকের এই উপাদানে থাকে টক্সিক পদার্থ বিসফেনল যা ক্যানসারের অন্যতম কারণ। বিশেষত মুখ ও গলার ক্যানসারের কারণ হতে পারে এই উপাদান। এই বিষাক্ত পদার্থ শরীরে ঢুকলে অন্ত্র অবধি পৌঁছে যেতে পারে। অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা সহজেই রক্তে মিশে গিয়ে জমতে থাকে। কোষে কোষে পৌঁছে যায় এই টক্সিক উপাদান। নানা সংক্রমণজনিত রোগ, স্তন ক্যানসারেরও কারণ এই প্লাস্টিকজাত উপাদান। তাছাড়া অধিকমাত্রায় প্লাস্টিকের কণা শরীরে জমলে পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর পরিমাণ কমিয়ে দেয়। মহিলাদের হরমোন ক্ষরণে বাধা তৈরি করে। বিশেষ ইস্ট্রোজেন হরমোনের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে এই টক্সিক পদার্থ।