
সেকেন্ড-হ্যান্ড স্মোকিং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়, বাচ্চারাও বিপদে: ল্যানসেট
সিগারেট খান না। সুখটানে রুচিও নেই। তবুও আপনি তামাকজনিত দূষণে ফুসফুসের ক্য়ানসারে আক্রান্ত হতে পারেন। সেটা কীভাবে? গবেষকরা বলছেন, প্য়াসিভ স্মোকিং বা যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে সেকেন্ড-হ্যান্ড স্মোকিং (Second-hand smoke) সেটাই যত গণ্ডগোলের কারণ। আপনার ঠিক পাশেই কেউ সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে সুখটান দিলে তাতে ক্ষতি বেশি হবে আপনারই। ধূমপান না করেও সিগারেটের বিষাক্ত টক্সিক পদার্থগুলো আপনার ফুসফুসে ঢুকে বাসা বাঁধবে।
বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেট তাদের গবেষণাপত্রে জানাচ্ছে, এই সেকেন্ড-হ্যান্ড স্মোকিং ক্যানসারের (Second-hand smoke) অন্যতম বড় কারণ। বলা যেতে পারে, ক্যানসারের দশটা রিস্ক ফ্যাক্টরের মতো একটা।
২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে গবেষণা চালানো হয়েছিল। ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের ডিরেক্টর ক্রিস্টোফার মুরে বলছেন, যখন পাশের কোনও মানুষ ধূমপান করেন তখন অজান্তেই সেই ধোঁয়া ঢুকে যায় পার্শ্ববর্তী মানুষের দেহেও। এতে শুধু তামাকের ধোঁয়া নয়, থাকে আরও প্রায় ৭০০০ রকমের বিষাক্ত পদার্থ, যেগুলি বাড়িশিশুদের ক্ষেত্রে বেড়ে যায় লিম্ফোমা, লিউকিমিয়া ও মস্তিষ্কের ক্যানসারের ঝুঁকি।য়ে ২৩ রকমের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে (Second-hand smoke)।
দেখা গেছে, মহিলা ও পুরুষ মিলিয়ে যাঁরা সবচেয়ে বেশি ধূমপানে আসক্ত তাঁদের মধ্যে নানারকম ক্যানসারের (Cancer) প্রকোপ ধরা পড়েছে। ফুসফুস ক্যানসার থেকে ব্রেস্ট ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসার, মুখ ও গলার ক্যানসার এর মধ্যে বেশি। আবার যাঁরা ধূমপান করেন না কিন্তু প্য়াসিভ স্মোকিংয়ের শিকার, তাঁদের মধ্যেও এইসব ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। মহিলাদের মধ্যে যাঁদের বিআমআই ইনডেক্স বেশি এবং ওবেসিটি রয়েছে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা হাইপারটেনশন রয়েছে তাঁদের মধ্যেই ক্যানসারের (Cancer) প্রকোপ বেশি দেখা গেছে। আবার পুরুষদের মধ্যে যাঁদের ব্লাড প্রেশার, হাইপারটেনশন, উচ্চ কোলেস্টেরল, সুগার, প্রস্টেটের সমস্যা রয়েছে তাঁদের মধ্যে ক্যানসারের প্রকোপ বেশি। কোমর্বিডিটি থাকলে এবং সেকেন্ড-হ্যান্ড স্মোকিংয়ের শিকার হলে মারণ রোগ ধীরে ধীরে বাসা বাঁধতে থাকে শরীরে।
সাইড স্ট্রিম বাচ্চাদের ক্ষতি বেশি করে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিগারেটের ধোঁয়া দু’ভাবে শরীরে ঢুকতে পারে। সিগারেটের ধোঁয়া বাতাস থেকে সরাসরি নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকলে তাকে পরে মেন স্ট্রিম। সিগারেট জ্বালিয়ে রাখা আছে, তার থেকে ধোঁয়া সরাসরি বাতাসের সঙ্গে টেনে নিলে তাকে বলে সাইড স্ট্রিম (Second-hand smoke)। এই ধোঁয়ায় আরও বেশি বিষাক্ত রাসায়নিক আছে। ছোটদের ভয়ানক শারীরিক ক্ষতি করে। বড়রাও ক্ষতিগ্রস্ত হন। গর্ভবতী মহিলার সামনে যদি বাড়ির অন্য সদস্যেরা লাগাতার ধূমপান করতে থাকেন, তা হলেও বাচ্চার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকী, অন্য ঘরে সিগারেটের ধোঁয়া টানলেও হবু মায়ের শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
গর্ভাবস্থার শুরুতে মা ঘন ঘন সিগারেট টানলে অথবা পরোক্ষ ভাবে সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে থাকলে এক বছরের কমবয়সী শিশুদের মধ্যে আকস্মিক মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।